সদর উপজেলার গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক রুবেল চাকরির জন্য সুরাইয়া নামে এক নারীর কাছে ৭ লাখ টাকা নিয়েও চাকরি না দেয়ায় অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ওই নারী টাকা ফেরত পেতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বাড়িতে বিষের বোতল নিয়ে হাজির হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে ইতোমধ্যে ওই নারীকে অর্ধেক টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গ্রন্থগারিক শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সদর উপজেলার গড়েয়া মুন্সিপাড়া এলাকার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম ফারুক রুবেলের দ্বারস্থ হন। তিনি নিয়োগ দিবেন মর্মে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। তাতে রাজি হয়ে যান সুরাইয়া বেগম এবং অগ্রিম পুরো টাকাই দিয়ে দেন।
এদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ওই বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারিক ও এমএলএস শূন্যপদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গ্রন্থাগারিক পদে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের প্রার্থী উজ্জল হোসেনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এতে হতাশ হয়ে যান সুরাইয়া বেগমসহ অন্য প্রার্থীরা।
সুরাইয়াকে চাকরি দিতে না পারায় স্কুল ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ওইদিনই তাকে অর্ধেক টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা পরে দিবেন বলে জানিয়ে দেন।
এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে সুরাইয়া বেগম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বাড়িতে বাকি উৎকোচের টাকা ফেরত নেয়ার জন্য আসেন। এসময় তিনি বিষের বোতল হাতে নিয়ে আসেন। সেখানে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হলে সভাপতি সুরাইয়াকে কয়েকদিন পর টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিদায় জানান।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ও এমএলএস পদে নিয়োগ আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে গ্রন্থাগারিক পদে ১২ জন ও এমএলএস পদে ৯ জন আবেদন করেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই দুই পদে নিয়োগ প্রদানের কথা বলে অনেক প্রার্থীর কাছে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু সেই সকল প্রার্থীদের নিয়োগ না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও এমপির পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ও এমএলএস শূণ্যপদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় এমপি রমেশ চন্দ্র সেন নিজেই উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের পরীক্ষা নেন। পরে গ্রস্থাগারিক পদে উজ্জল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা হয়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রার্থী জানান, গ্রস্থাগারিক ও এমএলএস পদের জন্য চাকরি দেয়ার নামে স্কুল কমিটি অনেকের কাছে ৮-১০ লাখ টাকা অগ্রিম নেয়। কিন্তু কারও চাকরি দিতে পারেনি। আরও বেশি টাকার বিনিময়ে এমপি সাহেব, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রুবেল ও প্রধান শিক্ষকের মতামতে ওই দুই পদে নিয়োগ দিয়েছেন অন্যজনকে। আমরা অনেকেই জমি জায়গা, গরু, বাছুর বিক্রি করে চাকরির আশায় টাকা দিয়েছিলাম স্কুল কমিটিকে। আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছি।
গ্রস্থাগারিক প্রার্থী সুরাইয়া বেগম ও তার স্বামী আব্দুল কাদের জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বড় নেতা রুবেল ভাইয়াকে তার কথা মত ৭ লাখ টাকা প্রদান করেছিলাম। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন চাকরিটা হবেই। কিন্তু, অন্যজনের কাছে বেশি টাকা নিয়ে এমপি, প্রধান শিক্ষক ও উনি নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন। নিয়োগ দিতে না পারায় সভাপতি ইতোমধ্যে অর্ধেক ফেরত দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাকি টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করায় আমার স্ত্রী উনার বাড়িতে (সভাপতির) বিষের বোতল নিয়ে গেছিলেন। বাকি অর্ধেক টাকা ২ অক্টোবর (আজ) দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উজ্জলের কাছে জানতে চাইলে স্কুলের উন্নয়নের জন্য স্কুল ফান্ডে কিছু টাকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি শিকার করেন।
গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওহিদুল ইসলাম জানান, এমপি সাহেবের উপস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তারপর নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনেকের কাছে টাকা নিয়েছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন কারও কাছে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।
গড়েয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক রুবেল জানান, টাকার বিনিময়ে কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। চাকরি দেয়ার নামে সুরাইয়া বেগম নামে কোনো নারীর কাছে টাকা নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আবেগের বশে কেও কিছু বললে তা তো আর সত্য নয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার মোশারফ হোসেন জানান, সকলের উপস্থিতিতে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার প্রার্থীকে চূড়ান্ত করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেন জানান, নিয়োগ পরীক্ষায় আমি উপস্থিত থেকে স্বচ্ছভাবে মেধার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। কেউ যদি চাকরির জন্য অন্য কাউকে টাকা দিয়ে থাকেন সেটি ভুল করেছেন।
সংগ্রহ: jagonews24
0 Please Share a Your Opinion.: