কাইল থাইক্যা ইলিশ ধরা বন্ধ আইজই বেশি কইরা লইয়া যান


‘এক দাম এক রেট। এক টাকাও কম অইবো না। ছোটডা প্রতি কেজি ৪শ’ আর বড়ডা ৬শ’ টাকা কেজি। কেজিতে মাত্র ২০টা লাভ অইবো। কি আপা দিমু, কয় কেজি
আজ (শনিবার) সকাল ১০টায় আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের সামনে একজন ইলিশ মাছ বিক্রেতা এক তরুণী ক্রেতাকে লক্ষ্য করে এ কথাগুলো বলছিলেন।



দুই ভ্যানগাড়িতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা ৪শ’ ও ৬শ’ টাকা কেজি দামের ইলিশ মাছ। ক্রেতাদের অধিকাংশই দাম জিজ্ঞাসা করছিলেন কিন্তু কিনছিলেন কম। বিক্রি কম হলেও বিক্রেতার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ নেই।
রহমান নামের ওই মাছ বিক্রেতা বার বার ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, কাইল থাইক্যা তিন সপ্তাহেরও বেশি ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবো। তাই ইলিশের সরবরাহ অনেক কম অইবো। এছাড়া আইজ নদীতে প্রতিমা ডুবাইবো। কথায় আছে, প্রতিমা ডুবানোর পর ইলিশ মাছের স্বাদ থাকে না, কাদা কাদা লাগে।
আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবি আবদুস সালাম স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এসে দেড় হাজার টাকায় আড়াই কেজি ইলিশ কিনেন। বেশ কয়েকবার দাম কিছুটা কম নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত এক দামেই মাছ কিনেন। 
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কয়েকদিন আগেও তিনি এর চেয়ে বড় সাইজের ইলিশ ৫শ’ টাকা কেজিতে কিনেছেন। কয়েক দিনের ব্যবধানে ইলিশের কেজি ১শ’ টাকা দাম বেড়েছে।



রিনা বেগম নামের আরেক গৃহবধূ বলেন, এ বছর ইলিশ মাছের দাম তুলনামূলক কম ছিল। পরিবার পরিজনকে নিয়ে যেমন খেয়েছেন তেমন কিনে ফ্রিজেও রেখেছেন। রিনা বেগম ইলিশ বিক্রেতার কথা উদাহারন টেনে বলেন, আমরাও ছোটবেলা থেকে মুরুব্বীদের মুখে শুনে আসছি প্রতিমা বিসর্জনের পর ইলিশ মাছের স্বাদ থাকে না। তাই আজ কিছু মাছ কিনতে আসছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখনও ইলিশ মাছের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। তবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুসারে আগামী ১ অক্টোবর (রোববার) থেকে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ সময়টা ইলিশ মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ইলিশ মাছ সংরক্ষণের জন্য এই ২২ দিন মাছ ধরা ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে নৌ পুলিশ তৎপর থাকবে।


সরকারের এই আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, জামদানির পর এবার বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর ফলে ইলিশ বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।

শেয়ার করুন

0 Please Share a Your Opinion.: